একটি ছোট্ট শিশুর কাছে মূল্যবান কোন রত্নও নিছক খেলনা মাত্র, কারণ ঐ জিনিসের গুরুত্ব তার কাছে বোধগম্য নয় যে। কারণে সে মূল্যবান রত্ন দিয়ে কিছুক্ষণ খেলা করে হয়তো ফেলে দেবে অবহেলায়, কিংবা কোন চালাক লোক হয়তো চকলেট কিংবা অন্য কোন খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে তার কাছ থেকে নিয়ে নেবে দামী রত্নটি। বস্তুত, দামী জিনিসের দাম যারা বুঝে না তারা সে জিনিস নিজের কাছে বেশিক্ষণ রাখতে পারে না, আবার যারা ঐ জিনিসের গুরুত্ব বুঝে তারা সেটি নিজের অধিকারে নেয়ার চেষ্টা করে থাকে।
ছাত্রজীবন যে কত মূল্যবান, তাদের এই সময়টা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা তারা নিজেরাই অনেক সময় বুঝতে পারে না। আর এই না বুঝার কারণেই তারা অত্যন্ত অবহেলায় তাদের এই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। এজন্য অবশ্য শুধু ছাত্রদেরকেও একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই, কারণ আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের সামনে জীবনের কোন মহৎ আদর্শ ও লক্ষ্য তুলে ধরতে পারেনি; তাদের সামনে নেই জীবনের কোন সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য। ভাল কোন চাকরি লাভ বা পয়সা উপার্জনই বর্তমান সময়ে পড়াশোনার একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ভোগবাদই যেন শিক্ষার এবং জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে। যার কারণে ছাত্ররা তাদের জীবনে কোন মহৎ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আদর্শের তাড়না অনুভব করে না। বরং এই তরুণ বয়সে জীবনকে উপভোগ করার বর্ণিল আহবান ও চাকচিক্যই তাদেরকে বেশি প্ররোচিত করে, তারা সেগুলো উপেক্ষা করতে পারে না এবং সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে হারিয়ে যায়। এতে শুধু যে তাদের পড়াশোনাই নষ্ট হয় তাই নয়, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতেও তারা ব্যর্থ হয়।
আজ আমাদের এই ছোট্ট দেশটিতে যে মারাত্মক নৈতিক অবক্ষয়, সর্বগ্রাসী যে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও রাহাজানি অক্টোপাসের মত আষ্টেপিষ্টে আমাদেরকে বেঁধে ফেলেছে, তার মূল কারণ আজ উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এ অবস্থা যদি আরো অব্যাহত থাকে তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের পতন অবশ্যম্ভাবি। আসলে গোড়ায় গলদ রেখে মাথায় পানি ঢেলে লাভ নেই। জাতিকে বাঁচাতে হলে জাতির ভবিষ্যতকে আগে বাঁচাতে হবে।
জাতির ভবিষ্যত নাগরিকদেরকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের সামনে জীবনের সঠিক পথ, সঠিক জীবনদৃষ্টি এবং তাদের জীবনের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করাই শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত। শুধু অর্থ উপার্জন, শুধু উদরপূর্তি, শুধু বৈষয়িক প্রতিপত্তি অর্জন করাই শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং দেহ, মন ও আত্মিক উন্নতির বিষয়টিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ঐশী কালাম আল কোরআনই সেই মহৎ আদর্শের নাম যা মানুষকে সত্যিকার মানুষ বা ইনসানে কামেল হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। আমরা সেই ঐশী জীবনাদর্শের আলোকেই ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে জীবনের একটি মহৎ স্বপ্ন এঁকে দিতে চাই। আশা করি এই স্বপ্নের পথে হেঁটেই তারা জীবনের সঠিক তাৎপর্য খুঁজে পাবে ইনশায়াল্লাহ।